ব্রাহ্মণবাড়িয়া ০৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
নাসিরনগরে লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি, নারীসহ আহত  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুদকের উদ্যোগে ও  জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে দুর্নীতি বিরোধী রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা মিয়াজুল হত্যাকান্ডের জের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিপক্ষের ৫০ ঘর \ স্বর্ণালংকার ও গরু লুট বিজয়নগরে যুবদল নেতার সহযোগিতায় যুবলীগ নেতা‌ পলায়ন কসবায় কো-অপারেটিভ কর্পোরেশনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত বকেয়া বেতন-ভাতার দাবীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন-সড়ক অবরোধ আখাউড়ায় বিয়ের ৮দিন পর স্ত্রীর হাতে হত্যার শিকার হলেন স্বামী বিজয়নগরে দুদকের উদ্যোগে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন অর্থ আত্মসাত মামলায় কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দোয়া মাহফিল

নাসিরনগরে ২ মাসে ৩১ ট্রান্সফরমার চুরি 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এবার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোর আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে উপজেলাবাসীরা। গত দুই মাস (নভেম্বর ও ডিসেম্ভরে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে বোরো জমির সেচ কাজে ব্যবহৃত ২২টি, ২টি শিল্প ও ৭টি আবাসিক গ্রাহকের ট্রান্সফরমার। এতে বোরো চাষ ব্যহত হয়ে কৃষি উৎপাদন বিঘ্ন হবে বলে স্থানীয় কৃষকদের দাবী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিরনগরে শীত আসার সাথে সাথে চুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতই শীতেও নিয়মিত লোডসেডিং হচ্ছে। তাই রাতে যখনই লোডসেডিং শুরু হয় তখনই উপজেলার কোন না কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা এসবের সাথে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রেশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়োগকৃত কোন ইলেকট্রেশিয়ান এসবে জড়িত না। চুরি ঠেকাতে বার বার উপজেলা মাসিক আইনশৃংক্সখলা সভায় কথা বলছি। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছে। তার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনিকি গত এক বছরে প্রায় একশোর মতো ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউই আটক হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের উবায়দুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গ্রামে গত ৭ জানুয়ারী রাতে সেচ প্রকল্পের চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তারা বলছে নিজেদের খরচে ট্রান্সফরমার লাগাতে হচ্ছে। এদিকে বোরোর সেচ মৌসুম চলে যাচ্ছে। তাই কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
একই গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেচ কাজ বন্ধ। জমিতে হালচাষ করে রাখছি কিন্তু পানির কারণে বোরো আবাদ করতে পারেতছিনা। ট্র্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমি নিয়া বেকায়দায় পড়ছি।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের দুই মাসে ৩১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ৯টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ৬টি, গোকর্ণ ইউনিয়নে ৮টি, কুন্ডা ইউনিয়নে ২টি ও চাপরতলা ৫াট। এছাড়ও চলতি মাসের প্রথম এক সপ্তাহে ৮টিসহ এ উপজেলায় গত এক বছরে ৯০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
এদিকে বুড়িশ্বর ইউনিয়নে চলতি মাসের ৯ তারিখ পল্লীবিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ৩টি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াইলাখ টাকা।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের কৃষক গৌর পাল বলেন, সঠিক সময়ে পানি না পেলে আমরা বোরো আবাদ করতে পারবো না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। একই অভিযোগ ওই এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন, মিজান শাহা, আলাউদ্দিন ও আলাল শাহার।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, নিয়মিতভাবেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। এতে করে কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে না পারায় আবাদ ব্যাহত হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশোর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এসবে স্থানীয় কিছু অসাধুচক্র জড়িত। আমরা নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করেছি কিন্তু কেউই আটক হয়নি। তবে এসব রোধে স্থানীয়দেরও পাহাড়ার ব্যবস্থাসহ সর্তক থাকতে হবে।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে পল্লীবিদ্যুৎ থেকে শুরু করে কোন গ্রাহকই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mamun

Popular Post

নাসিরনগরে লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি, নারীসহ আহত 

নাসিরনগরে ২ মাসে ৩১ ট্রান্সফরমার চুরি 

Update Time : ০৩:৫৭:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এবার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোর আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে উপজেলাবাসীরা। গত দুই মাস (নভেম্বর ও ডিসেম্ভরে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে বোরো জমির সেচ কাজে ব্যবহৃত ২২টি, ২টি শিল্প ও ৭টি আবাসিক গ্রাহকের ট্রান্সফরমার। এতে বোরো চাষ ব্যহত হয়ে কৃষি উৎপাদন বিঘ্ন হবে বলে স্থানীয় কৃষকদের দাবী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিরনগরে শীত আসার সাথে সাথে চুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতই শীতেও নিয়মিত লোডসেডিং হচ্ছে। তাই রাতে যখনই লোডসেডিং শুরু হয় তখনই উপজেলার কোন না কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা এসবের সাথে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রেশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়োগকৃত কোন ইলেকট্রেশিয়ান এসবে জড়িত না। চুরি ঠেকাতে বার বার উপজেলা মাসিক আইনশৃংক্সখলা সভায় কথা বলছি। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছে। তার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনিকি গত এক বছরে প্রায় একশোর মতো ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউই আটক হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের উবায়দুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গ্রামে গত ৭ জানুয়ারী রাতে সেচ প্রকল্পের চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তারা বলছে নিজেদের খরচে ট্রান্সফরমার লাগাতে হচ্ছে। এদিকে বোরোর সেচ মৌসুম চলে যাচ্ছে। তাই কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
একই গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেচ কাজ বন্ধ। জমিতে হালচাষ করে রাখছি কিন্তু পানির কারণে বোরো আবাদ করতে পারেতছিনা। ট্র্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমি নিয়া বেকায়দায় পড়ছি।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের দুই মাসে ৩১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ৯টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ৬টি, গোকর্ণ ইউনিয়নে ৮টি, কুন্ডা ইউনিয়নে ২টি ও চাপরতলা ৫াট। এছাড়ও চলতি মাসের প্রথম এক সপ্তাহে ৮টিসহ এ উপজেলায় গত এক বছরে ৯০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
এদিকে বুড়িশ্বর ইউনিয়নে চলতি মাসের ৯ তারিখ পল্লীবিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ৩টি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াইলাখ টাকা।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের কৃষক গৌর পাল বলেন, সঠিক সময়ে পানি না পেলে আমরা বোরো আবাদ করতে পারবো না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। একই অভিযোগ ওই এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন, মিজান শাহা, আলাউদ্দিন ও আলাল শাহার।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, নিয়মিতভাবেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। এতে করে কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে না পারায় আবাদ ব্যাহত হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশোর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এসবে স্থানীয় কিছু অসাধুচক্র জড়িত। আমরা নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করেছি কিন্তু কেউই আটক হয়নি। তবে এসব রোধে স্থানীয়দেরও পাহাড়ার ব্যবস্থাসহ সর্তক থাকতে হবে।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে পল্লীবিদ্যুৎ থেকে শুরু করে কোন গ্রাহকই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।