ব্রাহ্মণবাড়িয়া ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
News Title :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অজ্ঞাত এক নারী মায়ের হারানো ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে তার শিশু সন্তানকে চুরি  এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ‘ডাক্তার’ নয়: হাইকোর্ট অপসাংবাদিকতা রোধে সকলকে সোচ্চার থাকার আহবান জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিটিজেএ) নাসিরনগরে ফুটবল খেলা নিয়ে গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকল্প বাগাতে তৎপর বিতর্কিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় ১ জন বাংলাদেশী নাগরিক আটক  এআরডি’র উদ্যেগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত মহাসড়কের পাশে ঝোপ থেকে নবজাতক উদ্ধার! ঢাকায় হোটেলে আগুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত

গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা, শ্বশুর-শ্বাশুরী আটক

Oplus_131072

নরসিংদী জেলার রায়পুরার মুক্তা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে আশুগঞ্জ থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এর আগে ভোর চারটার দিকে নিহতের লাশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে ওই আত্মীয়কে লাশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
নিহত মুক্তা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর (কুড়ের পাড়) গ্রামের গোলাম মিয়ার মেয়ে। তার ৭ মাস বয়সী একটি পূত্র শিশু রয়েছে।
এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের শ্বশুর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও শ্বাশুরী খোশনাহার বেগমকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী খোশনাহার বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রাত ৮ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত মুক্তা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। রাত ২টার দিকে স্বামী আব্দুল্লাহ মুক্তাকে মুখে হাত চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা আড়াল করতে মুক্তার লাশ তার পরিবারের নিকট অসুস্থতার খবর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মুক্তাকে মৃত ঘোষণা করলে খায়েশ মিয়া নামে আত্মীয়কে দিয়ে সিএনজিতে লাশটি মুক্তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আর আসেনি। মুক্তার বুকের ব্যাথার কথা বলে তারা ওই আত্মীয়কে সহযোগিতা করতে সাথে নিয়েছিল।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিগত দেড় বছর আগে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহর সাথে মুক্তার বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ মিষ্টির দোকানের কারিগর। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের লোকজন মিষ্টির দোকান দেয়ার জন্য মুক্তার পিতার নিকট তিন লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত মুক্তাকে মানসিক নির্যাতনসহ মারধর করত। এ নিয়ে দুই পনিবারের মাঝে বিগত এক বছরে বেশ কয়েকটি সালিশ হয়েছে। মুক্তার পিতা গোলাপ মিয়া মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দেয়ার আশ্বাস দিলেও অক্ষমতার জন্য ব্যবস্থা করতে না পারায় দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে মুক্তার একটি পূত্র শিশুর জন্ম হয়। যার বয়স বর্তমানে ৭ মাস। গোলাপ মিয়া মেয়ের জামাইকে মিষ্টির দোকান দিতে টাকা দিতে না পারলেও তার মেয়ের ও নাতির চিকিৎসা, ও সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ প্রদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মুক্তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে তারা পিতা গোলাপ মিয়াকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় স্বামীর সাথে ঝগরা করে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে গোলাপ মিয়া সদর হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তার লাশ নিয়ে বেড়িয়ে যায়। পরে তিনি বাড়িতে এসে তার মেয়ের লাশ দেখতে পান। এদিকে সকালে নিহতের শ্বশুর ও শ্বাশুরী মুক্তার লাশ দেখতে এলে পুলিশ তাদের আটক করে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজল কান্তি দাস বলেন, নিহতের লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের শ্বশুর শ্বাশুরীকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল নরসিংদী উপজেলার রায়পুরায় তাই নিহতের স্বজনদের রায়পুরা থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mamun

Popular Post

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অজ্ঞাত এক নারী মায়ের হারানো ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে তার শিশু সন্তানকে চুরি 

গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা, শ্বশুর-শ্বাশুরী আটক

Update Time : ০২:৩৬:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
নরসিংদী জেলার রায়পুরার মুক্তা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে আশুগঞ্জ থানার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এর আগে ভোর চারটার দিকে নিহতের লাশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে ওই আত্মীয়কে লাশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
নিহত মুক্তা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর (কুড়ের পাড়) গ্রামের গোলাম মিয়ার মেয়ে। তার ৭ মাস বয়সী একটি পূত্র শিশু রয়েছে।
এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের শ্বশুর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও শ্বাশুরী খোশনাহার বেগমকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী খোশনাহার বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রাত ৮ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত মুক্তা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। রাত ২টার দিকে স্বামী আব্দুল্লাহ মুক্তাকে মুখে হাত চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা আড়াল করতে মুক্তার লাশ তার পরিবারের নিকট অসুস্থতার খবর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার মুক্তাকে মৃত ঘোষণা করলে খায়েশ মিয়া নামে আত্মীয়কে দিয়ে সিএনজিতে লাশটি মুক্তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আর আসেনি। মুক্তার বুকের ব্যাথার কথা বলে তারা ওই আত্মীয়কে সহযোগিতা করতে সাথে নিয়েছিল।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিগত দেড় বছর আগে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহর সাথে মুক্তার বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ মিষ্টির দোকানের কারিগর। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের লোকজন মিষ্টির দোকান দেয়ার জন্য মুক্তার পিতার নিকট তিন লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। এ নিয়ে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত মুক্তাকে মানসিক নির্যাতনসহ মারধর করত। এ নিয়ে দুই পনিবারের মাঝে বিগত এক বছরে বেশ কয়েকটি সালিশ হয়েছে। মুক্তার পিতা গোলাপ মিয়া মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দেয়ার আশ্বাস দিলেও অক্ষমতার জন্য ব্যবস্থা করতে না পারায় দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে মুক্তার একটি পূত্র শিশুর জন্ম হয়। যার বয়স বর্তমানে ৭ মাস। গোলাপ মিয়া মেয়ের জামাইকে মিষ্টির দোকান দিতে টাকা দিতে না পারলেও তার মেয়ের ও নাতির চিকিৎসা, ও সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ প্রদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মুক্তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে তারা পিতা গোলাপ মিয়াকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় স্বামীর সাথে ঝগরা করে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে গোলাপ মিয়া সদর হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তার লাশ নিয়ে বেড়িয়ে যায়। পরে তিনি বাড়িতে এসে তার মেয়ের লাশ দেখতে পান। এদিকে সকালে নিহতের শ্বশুর ও শ্বাশুরী মুক্তার লাশ দেখতে এলে পুলিশ তাদের আটক করে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজল কান্তি দাস বলেন, নিহতের লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের শ্বশুর শ্বাশুরীকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল নরসিংদী উপজেলার রায়পুরায় তাই নিহতের স্বজনদের রায়পুরা থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে।