পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এঁর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বসবাসকারী জনসংখ্যার উপর অনুষ্ঠিত উক্ত শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ১৫ থেকে ২১ জুন ২০২২ সময়ে সম্পন্ন হয়। জেলা রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ জন। এর মধ্যে পল্লিতে ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৫ জন এবং শহরে ৬ লাখ ৮১ হাজার ৮৭৮ জন লোক বসবাস করেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার জনসংখ্যা সর্বাধিক ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২১৩ জন এবং আখাউড়া উপজেলার জনসংখ্যা সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫১ জন। অন্যান্য উপজেলার জনসংখ্যা, আশুগঞ্জ ২ লাখ ১০ হাজার ৩৪৭ জন, বাঞ্ছারামপুরে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ১০২ জন, বিজয়নগরে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪২৪ জন, কসবায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৫৪ জন, নবীনগরে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮০৭ জন, নাসিরনগরে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৭ জন এবং সরাইলে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫২ জন।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গণনাকৃত মোট ৩৩ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ জন জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৬২ জন, নারী ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৪৫ জন ও হিজড়া ১৫৬ জন। এ জেলায় পল্লি ও শহর এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার হার যথাক্রমে ৭৯.৩৮% ও ২০.৬২%। বস্তিতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৮ হাজার ১৩২ জন এবং মোট ভাসমান জনসংখ্যা ৬৬৯ জন।
প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৭৫৮ জন এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার শতকরা ১.৩৫ ভাগ।
সাধারণ খানা, প্রাতিষ্ঠানিক খানা ও অন্যান্য খানায় বসবাসকারী জনসংখ্যার হার যথাক্রমে ৯৭.৬৪%, ১.৭২% ও ০.৬৪%। জেলার সাধারণ খানার ক্ষেত্রে পুরুষ প্রধান খানা ৬৮.৩৫% ও নারী প্রধান খানা ৩১.৬৫%। জেলার মোট ৮৯.০৩% খানা নিজস্ব মালিকানাধীন বাসগৃহে বসবাস করে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী জেলার গড় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৫% যা ২০১১ সালে ছিল ১.৬৮ শতাংশ। জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৫-৯ বছর বয়সী জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি, ১২.৩৫%। জেলায় লিঙ্গানুপাত ৮৭.০০, নির্ভরশীলতার অনুপাত ৭২.৩৯ এবং শিশু-নারী অনুপাত ৪২২.৭৪।
প্রতিবেদন বলছে, ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬০.৬৮% বর্তমানে বিবাহিত এবং ৩৩.০৯% অবিবাহিত। পুরুষ ও নারীর বিবাহের গড় বয়স যথাক্রমে ২৫.৪৮ এবং১৯.০৭ বছর। ধর্মভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেলায় বসবাসরত মোট জনসংখ্যার ৯৩.২৯% মুসলিম, ৬.৬৮% হিন্দু, ০.০১% বৌদ্ধ, ০.০২% খ্রিস্টান ও ০.০০১% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৫ হাজার ৫৩৮ যা জেলার মোট জনসংখ্যার ১.৩৮ শতাংশ।
জেলায় ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭২.১২%। পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৭১.৭৪% ও ৭২.৪৪%। একই বয়সী জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে পলি এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭০.৫৮% ও শহর এলাকায় ৭৭.৯৪%। জেলার ৫-২৯ বছর বয়সী মোট পুরুষের মধ্যে ৫৬.৬০% ও নারীদের মধ্যে ৫১.৯২% বর্তমানে শিক্ষার্থী। শিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে সাধারণ শিক্ষা সর্বোচ্চ, ৮৮.২১%; এরপর রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা ৮.৯৬%, কারিগরি শিক্ষা ২.৪৮% ও অন্যান্য ক্যাটাগরির শিক্ষা ০.৩৪%। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মোট ৬৭.৬৩ শতাংশ মানুষের নিজ ব্যবহারের মোবাইল ফোন রয়েছে এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে মোট ৪৭.৯১ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
মোট কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৬.২৯% সেবাখাতে, ৪১.৪৪% কৃষি এবং ১২.৩৬% শিল্পখাতে কর্মরত রয়েছে। এছাড়া, ১৫ হতে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা শুমারিকালে কোনরূপ শিক্ষা, অর্থনৈতিক কাজ বা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ছিলেন না এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২,৬৭,০৮৫ যা বর্ণিত মোট জনংখ্যার ৪১.৭০%।
জেলার সর্বমোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৬টি খানা প্রবাস আয় গ্রহণ করে যার মধ্যে সর্বাধিক ২১.২৭% খানার অবস্থান নবীনগর উপজেলায় এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, ১৮.৬০%।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ শাখাওয়াত হোসেন এবং সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন । অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: সাইফুল ইসলাম।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও রিপোর্ট সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন উপপরিচালক, জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় মোহাম্মদ কামাল হোসেন । এছাড়াও, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং অন্যান্য সরকারি অফিসের কর্মকর্তাগণ সহ পরিসংখ্যান অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।