যুগ যুগ ধরে শুরু হওয়া পহেলা বৈশাখ এখন কোটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। গ্রাম বাংলার লোকজ-ঐতিহ্য বা বিভিন্ন ধরনের লোকগান কিংবা লোকজ সংস্কৃতি প্রচার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বৈশাখী উৎসবের আন্তরিক প্রয়াসের পরিচয় মেলে।
বাঙালির ঐতিহ্য পুতুল নাচ, নাগরদোলা, লাঠিখেলা, খই, চিড়া, মুড়ি, মুয়া, দই, মিঠাই, পান্তাভাত, তিল্লাই, লাড্ডু, এসবই যেন আমাদের বাঙালিয়ানা জাগিয়ে তোলার এক দৃপ্ত প্রয়াস। বাঙালিয়ানার এতিহ্য ধরে রাখার প্রত্যয় নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংস্কৃতির বটবৃক্ষ ও সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গবেষক সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেনের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন সাহিত্য একাডেমি ১৩৯০ বাং (১৯৮৩ খ্রি.) প্রতিষ্ঠিত হলে বাঙালির সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারায় সুনামের ১৬ আনা পালনের দৃঢ় চেষ্টায় ব্রত থাকলেও সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পর অর্থাৎ ১৩৯৪ বাং (১৯৮৭ খ্রি.) থেকে স্থানীয় শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর (অধূনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়েল স্কুল) মাঠে ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব পালন করে আসছে যা পর্যায়ক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানুষের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। তখন থেকে সাহিত্য একাডেমি আয়োজিত ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবটি সুধীজনের সঙ্গে প্রান্তিক মানুষদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করে চলেছে।সারাদেশে দিনব্যাপী কিংবা তিন দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব উদযাপিত হলেও সাহিত্য একাডেমি উৎসবটি ৭ দিনব্যাপী উদযাপন করে আসছে দীর্ঘ ৩৮ বছর। বর্তমানে এই উৎসবটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তালিকায়ও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
এবারের ৩৮তম ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব ১৪৩১ (১৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্র.) উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। উৎসবের দিন সকাল থেকে বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, লাঠিখেলা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, গান, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনা ইত্যাদি থাকছে। প্রথম দিনের সূচনাপর্বে নববর্ষের আহবানে সাংস্কৃতিক পর্ব সাহিত্য একাডেমি এবং ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্রের পরিবেশনার পরে ৩৮তম বৈশাখী উৎসব উদ্বোধন করবেন আলোচনা পরপরই সুর স¤্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন পরিবেশন করবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৩৮তম ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব ১৪৩১ এর আয়োজনটি বাঙালির অন্যতম আয়োজন বলে মনে করছেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন। তিনি ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবে আপামর জনসাধারণকে আমান্ত্রণ জানিয়ে বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব, এ উৎসবকে ঘিরে বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে চলে। কৃষকেরা নতুন ফসল ঘরে তুলে গ্রাম বাংলায় চিরাচরিত বান্নী বা মেলার আয়োজনে মেতে উঠে তাদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে মনের আনন্দ উপভোগ করে।
এছাড়াও ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন (বিপিএম- সেবা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. কুদদূস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আবু সাঈদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা। স্বাগত বক্তব্য দিবেন সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন, শুভেচ্ছা বক্তব্য দিবেন ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্রের সভাপতি এস.আর.এম ওসমান গণি সজিব। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন।