ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সুহিলপুরে প্রভাবশালী দুই ভাই অবৈধ ভাবে ড্রেজারে গভীর করে মাটি উত্তোলন করায় আশপাশের বাড়িঘর ও বৈদ্যুতিক লাইন সহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এর ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়া তারা গ্রামের সরকারি খালের দুইপাশের মুখ বন্ধ করে দিয়ে নিজেরাই ইজারা দিয়ে দিয়েছেন। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন হতদরিদ্র মৎসজীবিরা। এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর ওই এলাকার ৫৫জন বাসিন্দা সাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সুহিলপুর মৌলভী বাড়ি সংলগ্ন আশুগঞ্জ-আখাউড়া ফোর লেন রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে একই ইউনিয়নের মৃত কাদির মিয়ার দুই ছেলে দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল হাজারি ও হারুন মিয়া বালু উত্তোলন করে আসছে। তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা, সরকারী খাসের জায়গা এবং সরকার প্রদত্ত ভূমিহীনদের জায়গা সহ আরো আশপাশের অনেক জায়গা থেকে প্রায় ১২০ ফুট গভীর করে মাটি উত্তোলন করে। এতে করে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় আশপাশের কৃষি জমি, তৎসংলগ্ন বাড়ি ঘর, গ্যাস ফিল্ডের কোয়ার্টার সহ গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন এবং বিভিন্ন বহুতল বিশিষ্ট স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
এই দুই ভাই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ইতিমধ্যে নবনির্মিত ফোর লাইন সড়ক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু কালাম ভূঁইয়া রোড এবং তালুকদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটির অর্ধেক ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের প্রধান খালটির দুই পাশে বন্ধ করে দিয়ে ইজারা দিয়ে টাকা নিয়েছেন। মূলত সরকারি এই খালটিতে এলাকার দুঃস্থ অসহায় ও গরীব জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। তারা খালটি দখল করে বন্ধ মুখ বন্ধ করে ইজারা দেওয়ায় এলাকার হতদরিদ্র জেলেদের জীবন জীবিকা নির্বাহে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
তাদের এসব কার্যকলাপে মৌখিক ভাবে একাধিকবার গ্রামবাসী বাধা নিষেধ দিয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরাঘুরি করে কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে গত ২০ আগস্ট ড্রেজারটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তায় জব্দ করলেও এরপর দিনই এসব মালামাল ফিরিয়ে নিয়ে আসে। গত কিছুদিন পূর্বে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কাটার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর দুলাল ও হারুন সন্দেহ করে স্থানীয় শফিকুল ইসলাম ও মুর্শেদ হাজারীর উপর হামলা করে। তারা মারপিট করে অফিস ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর গ্রামের বাসিন্দারা আবেদন করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল হাজারির মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন নাই।
এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধ ড্রেজার জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ড্রেজারে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করলে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।