রসালো ফল লিচু স্বাদে ও গুনে অনন্য হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া লিচুর কদর রয়েছে দেশজুড়ে। জেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার মাটি সুমিষ্ট লিচু উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে লিচুর আবাদ। তবে এবার প্রচন্ড গরমে লিচু ফেটে যাওয়া ও আঁকারে অনেকটাই ছোট হওয়ায় লিচু চাষীরা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদিকে তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে চাষীদের সেচসহ প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে বাগানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, লিচুর গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে বোম্বাই, পাটনা ও চায়নাসহ বাহারি জাতের লিচু। কিছু কিছু গাছে ঝুলে থাকা লাল রাঙ্গা লিচু বাতাসের দুল খাচ্ছে। আবার কিছু গাছে লাল সবুজের আঁধা পাঁকা লিচু ঝুলে আছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষরা ভীড় করছে এসব বাগান দেখতে। অনেকে আবার বাগান থেকে লিচু খেয়ে স্বাদ উপভোগ করে পরিবারের জন্য লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মওসুমে ৫৭০ হেক্টর জমিতে বোম্বাই, পাটনা ও চায়না জাতের লিচুর আবাদ করা হয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর,কসবা এবং আখাউড়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে সহশতাধিত লিচু বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর ও পাহারপুর ইউনিয়নে বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।
লিচু বাগান দেখতে আসা একজন দর্শনার্থী বলেন, স্বামীকে নিয়ে লিচু বাগানে ঘুরতে এসেছি। বাগানে এসে গাছে দুল খেতে থাকা লিচু দেখে আমি মুগ্ধ। মালিকের অনুমিতি নিয়ে দু,একটা লিচু খেয়েছি। লিচুগুলো খুবই রসালো ও মাংসাল। খেতে সুমিষ্ট হওয়াই পরিবারের জন্য পাঁচশ লিচু কিনেছি।
বাগান মালিক রমজান মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলানায় এবার ফলন ভাল হয়েছে। এখন চলছে লিচুর বেচাকেনা। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকরারা আসছে বাগানে। দাম ধর করে বাগান থেকেই লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে কিছু লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে।
ধন মিয়া নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, আমার বাগানে ৪২ টি গাছ রয়েছে। ফলন আসার সাথে সাথে পরিচর্যা শুরু করেছি। তবে এবার অতিরিক্ত গরমের কারনে দিনে কয়েক বার গাছে পানি দিতে হয়েছে। ফলন ভাল হলেও আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করছি।
বাগান মালিক আনোয়ার মিয়া বলেন, বোম্বাই, পাটনা ও চায়না থ্রিসহ তিন জাতের লিচু করেছি। আশা করছি এবার চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা লাভবান হব।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্পসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় লিচুর বেশী আবাদ হয়। এখানকার মাটির গুনাগুন ভাল হওয়াই প্রতিবছর বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাপমাত্রার কারণে লিচু কিছুটা ছোট হলে কৃষকদের নিয়মিত সেচের পরামর্শ দিয়েছি। এবার চলতি মওসুমে জেলায় ২৮শত মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য ৩০ কোটি টাকা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।