মমিনুল হক রুবেল, নবীনগর প্রতিনিধি: চেক জালিয়াতি, মিথ্যা প্ররোচনায় গ্রাহক ও এলাকাবাসীর কোটি টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর বাজারের ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের ম্যানেজার মামুন সোরোয়ার। সে হুরুয়া গ্রামের চাঁন মিয়া ছেলে। তার বিরুদ্ধে গ্রাহক ও এলাকাবাসী প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, মামুন সোরোয়ার দীর্ঘদিন যাবদ জিনদপুর বাজারের ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এতে করে ব্যাংকের গ্রাহক ও স্থানীয়দের সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। এই সুযোগে মামুন ব্যাংকে আগত গ্রাহকদের এফডিয়ারের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে, কৌশলে গ্রাহকদের ভূয়া রিসিট প্রদানের মাধ্যমে নিজের কাছে রেখে দেন এবং স্থানীয় কিছু সাধারন মানুষকে অধিক মুনাফা প্রদান ও বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলেও প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করেন। পুলিশ তাকে আটক করার পরও রহস্যজনক কারণে ছেড়ে
দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশের থেকে ছাড়া পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়াই ইতিমধ্যে এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন মামুন। এদিকে এঘটনার জানা জানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভোক্তভোগীদের দেখে মিলছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা ইমরান আহমেদ বলেন, আমার সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করা এবং বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলে মামুন প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। থানা থেকে জিম্মায় এসেই তিনি পালিয়ে গেছেন, আমি এ টাকা না পেলে আমি সর্বহারা হয়ে যাবো, কি করবো বুঝতেছিনা। আরেক ভুক্তভোগী জিনদপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ লিটন জানান, আমার তিন লাখ টাকার ব্যাংকে এফডিয়ার করেছিলাম, এখন ব্যাংকে এ্যাকাউন্ড চেক করে দেখি, আমার একাউন্টে কোন টাকাই নাই। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। আরেক ভুক্তভোগীর ভাই মোঃ রুবেল জানান, তার বোনের নামে ব্যাংকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিলো। মামুন ৫ লাখ টাকা এফডিয়ার করে দিবে আমার বোনকে বলছিলো। এখন এ্যাকাউন্ড চেক করে দেখি ৫ লক্ষ উদাও, একাউন্ডে মাত্র ৩০ হাজার টাকা আছে আর আমার বোনের নামে কোন এফডিয়ারও করেননি। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একাদিক ভুক্তভোগী মামুনের এ প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা মামুনের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জিনদপুর বাজারের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ফয়েজ আহমেদ জানান, মামুনের চেক জালিয়াতির বিষয়টি টের পেয়ে আমি মামুনের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় মৌখিক অভিযোগ করি। ওই দিনই পুলিশ নিজ গ্রাম থেকে মামুনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কিছু লোকজনের জিম্মায় রাত ১০টার দিকে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। জিম্মায় থাকা ব্যাক্তিরা ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেছিলো। তারা কি সমাধান করে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি এবং গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে আমি ব্যাংকের কার্যক্রম চালু রেখেছি।
এবিষয়ে জিনদপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ সুহেল আহাম্মেদ জানান, এব্যাপরে কেউ বাজার কমিটির কাছে কোন অভিযোগ করেন নি, তবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তিনিও এর সমাধান চান।
এবিষয়ে নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, মামুনকে আটক করেছিলো। ভাইস চেয়ারম্যান সহ তার পরিবার ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দিবে বলে তাদের জিম্মায় মামুনকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু সে পালিয়ে গেছে, ব্যাংকের স্বত্বাধিকারী যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক বলেন, মামুনকে ব্যাংকের সঠিক অডিটের জন্য তার পরিবারের জিম্মায় ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছিলো। যেহেতু সে লাপাত্তা হয়ে গেছে, এখন আর এটা সমাধানের উপায় নেই।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ একরামুল সিদ্দিকবলেন, বিষয়টি আমি ফেইসবুকে দেখেছি। ঐ ব্যাংকের উর্ধতনকর্মকর্তার সাথে আমি এবিষয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো।