নিজস্ব প্রতিবেদক:ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালত আবারও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারী) থেকে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে শুনানিতে আইনজীবীরা অংশ না করায় বেকায়দায় পড়েছে বিচার প্রার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে বিচার প্রার্থীরা নিজেই এই আদালতের শুনানি করছেন। আদালতে শুনানি শেষে জামিনও পেয়েছেন দুইজন আসামী। বুধবার দুটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে বিচার প্রার্থীদের শুনানিতেই।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালত সূত্রে জানা যায়, আইনজীবীরা গত ১ জানুয়ারী থেকে নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে শুনানি বর্জন করে আসছেন আইনজীবীরা। এতে করে গড়ে অসংখ্য মামলা শুনানি ব্যাহত হয়। গত ২২ কার্যদিবসে প্রায় ২০০০ মামলা শুনানি ব্যাহত হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিচার প্রার্থীরা নিজেরাই গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারী) আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। গতকাল ৫৭টি মামলা ধার্য ছিল। এরমধ্যে দুটি মামলায় আসামীরা জামিন পেয়েছেন। বুধবার ৬৩টি মামলার শুনানি ধার্য ছিল। তখন কোন আইনজীবী আদালতের এজলাসে উপস্থিত না থাকায় বিচার প্রার্থীরা নিজেরাই শুনানি করেন।এরমধ্যে দুটি মামলা উভয় পক্ষের সম্মতিতে সম্পূর্ণ নিস্পত্তি হয়ে যায়। এরমধ্যে বাদি মদিনা বেগম তার প্রতিবেশি খায়ের মিয়ার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা উঠিয়ে নেয়। অপরটি গত ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট দায়ের করা সেতু আক্তার নামে এক নারী তার স্বামী তারেকের বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে করা মামলা উঠিয়ে নেন।
এদিকে, সকাল ১০টার দিকে নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাতকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া এজলাসে এসে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাত অভিযোগ করে বলেন, আমি আদালতে কাজ করছিলাম। সকাল ১০টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি দুজন আইনজীবীকে সাথে নিয়ে আসেন। এসময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এজলাসেই থাকবো কিনা? কোন সময় কি নামতে হবে না! তিনি জজ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন,হে কি পাইসে,বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে কইলাম’।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি আদালত চত্ত্বরে ঘুরে এসেছি কিন্তু ভেতরে যায়নি। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। গতকাল আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সাথে কথা হয়েছে। তবে এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ, যা মিডিয়ায় প্রকাশ করার মতো নয়।
এই বিষয়ে নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আইনে বলা আছে, কারো মামলা যদি নিজে পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে এতে কোন বাধা নেই। নিজে মামলায় শুনানি করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেদের কাজ করতে আসেনি। আমরা এসেছি আইনের কাজ করতে। আদালতের এজলাসে আমি উঠতে বাধ্য। উচ্চ আদালতে নির্দেশ বা যদি কোন আদেশে আমাকে বদলী করা না হয়। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি বিব্রতকর অবস্থায় আছি।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারী থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করে আইনজীবীরা।
এছাড়াও বিচারকের সাথে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সাথে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।