ব্রাহ্মণবাড়িয়া ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকাল ২০২৫ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন দিবস ২০২৫ পালিত কনিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য আহসানুজ্জামান গেন্দু চৌধুরী ইন্তেকাল  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিপিএফ’র মাসিক সভায় ই-গভর্নেন্স বিষয়ে গ্রামীণ জনগনকে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রতিবাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতির উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব ডায়বেটিকস দিবস উদযাপন  বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফ্রি ডায়াবেটিস চেক-আপ সেবা বিজয়নগরে মোটরসাইকেলে ঘষা লাগাকে কেন্দ্র করে অটোচালককে পিটিয়ে হত্যা আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান মেলা ও উৎসব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত নাসিরনগরে জিয়া সাইবার ফোর্সের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন
অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু

বাঞ্ছারামপুরে অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো যেমন ভাঙন ঝুঁকিতে, তেমনি বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া চড়া মূল্যে বালুমহাল ইজরা নেওয়া বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত ২২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া জেলার নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায়ও মেঘনা নদী থেকে বালু লুট করছে রায়পুরার আরেকটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার বাজারমূল্য অন্তত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি। রীতিমতো অস্ত্রে স্বজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহাড়ায় দিনভর চলে বালু উত্তোলন। বালুখেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাইয়ূম মিয়া। তার সঙ্গে আছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি, কানাইগর ও শান্তিনগর গ্রাম।
অপরদিকে, নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার অপর একটি চক্র। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনকে নিয়ে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। এই চক্রটি কয়েক মাস আগে নবীনগর উপজেলার চরলাপাং এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচটি ড্রেজার জব্দ করে। সম্প্রতি ড্রেজারগুলো ছাড়ানোর পর আবারও ধরাভাঙ্গা এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এ সব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতংকে আছেন।
নবীনগরের চরলাপাং গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালুখেকো চক্রটি দিনের বেলা নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতে তীর পর্যন্ত চলে আসে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু তোলার কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি। ফলে নদীর তীরে বসবাস ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান তারা।
এদিকে, মেঘনা নদীর জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭৫ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্য ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। মূলত এই মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। এর প্রতিবাদ করায় বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মুন্সি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে কয়েকবার এসে হামলাও চালিয়েছে ওই চক্রটি।
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, বৈধ ইজারাদার হয়েও আমরা নদী থেকে ঠিকমতো বালু উত্তোলন করতে পারছি না। সরকারি কোষাগারে যে টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিয়েছি, মেয়াদ ফুরিয়ে আসলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি রায়পুরার ওই চক্রটি ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে। যেহেতু তাদের ইজারা মূল্য দিতে হয়নি, সেহেতু তাদের পুরোটাই লাভ।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বড়রকমের অপারেশনে যাব। যেহেতু এটি বারবার হচ্ছে, সেজন্য শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এবার আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mamun

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকাল ২০২৫ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু

বাঞ্ছারামপুরে অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু

Update Time : ০২:২০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অবাধে লুট হচ্ছে মেঘনা নদীর বালু। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো যেমন ভাঙন ঝুঁকিতে, তেমনি বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া চড়া মূল্যে বালুমহাল ইজরা নেওয়া বৈধ ইজারাদার প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত ২২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া জেলার নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায়ও মেঘনা নদী থেকে বালু লুট করছে রায়পুরার আরেকটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার বাজারমূল্য অন্তত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি। রীতিমতো অস্ত্রে স্বজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহাড়ায় দিনভর চলে বালু উত্তোলন। বালুখেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাইয়ূম মিয়া। তার সঙ্গে আছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি, কানাইগর ও শান্তিনগর গ্রাম।
অপরদিকে, নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার অপর একটি চক্র। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনকে নিয়ে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। এই চক্রটি কয়েক মাস আগে নবীনগর উপজেলার চরলাপাং এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচটি ড্রেজার জব্দ করে। সম্প্রতি ড্রেজারগুলো ছাড়ানোর পর আবারও ধরাভাঙ্গা এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এ সব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতংকে আছেন।
নবীনগরের চরলাপাং গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালুখেকো চক্রটি দিনের বেলা নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতে তীর পর্যন্ত চলে আসে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু তোলার কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি। ফলে নদীর তীরে বসবাস ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান তারা।
এদিকে, মেঘনা নদীর জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭৫ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্য ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। মূলত এই মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। এর প্রতিবাদ করায় বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মুন্সি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে কয়েকবার এসে হামলাও চালিয়েছে ওই চক্রটি।
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, বৈধ ইজারাদার হয়েও আমরা নদী থেকে ঠিকমতো বালু উত্তোলন করতে পারছি না। সরকারি কোষাগারে যে টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিয়েছি, মেয়াদ ফুরিয়ে আসলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি রায়পুরার ওই চক্রটি ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে। যেহেতু তাদের ইজারা মূল্য দিতে হয়নি, সেহেতু তাদের পুরোটাই লাভ।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বড়রকমের অপারেশনে যাব। যেহেতু এটি বারবার হচ্ছে, সেজন্য শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এবার আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।