শাহিনা বেগম: একবিংশ শতাব্দীতে এসে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে এসে আমরা মোবাইল ফোনের সাহায্যে ঘরে বসেই আমাদের যাবতীয় ব্যক্তিগত কাজ করে ফেলতে পারি খুব সহজেই।
মোবাইল ফোনের সাহায্যে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, কোনো অপরিচিত স্থান সর্ম্পকে জেনে নেওয়া, অনলাইনে বই পড়া, নতুন জগৎ সর্ম্পকে জানা, চিকিৎসাসেবা নেওয়া, ব্যবসায়িক বা অনলাইন কাজ করে লাভবান হওয়া সবই সম্ভব হচ্ছে এই মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে।
এই মোবাইল ফোনের এত এত উপকারিতা আমরা পাচ্ছি তারপরও আমরা কতটুকু নিরাপদে আছি এটি একটি প্রশ্ন বটে।
খেয়াল করলেই দেখা যায় কোনো একটি তুচ্ছ বিষয় ঘটলেই সেটি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে আর আমরাও সেগুলো ঠিকমতো না দেখে না বুঝে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে ফেলছি। মোবাইল ফোন যুবসমাজের উপর বিস্তরভাবে প্রভাব ফেলছে।
মোবাইল ফোন কখন আপনার জন্য অধিক ক্ষতির কারণ হবে?
আমরা যখন কোনো মোবাইল অ্যাপস ইন্সটল করি বা যখন কোনো লিংকে প্রবেশ করতে চাই তখন তারা যা যা শর্তাবলী দেয় পুরোটা কখনোই ঠিকভাবে না পড়ে সম্মতি দিয়ে দিই। আর তখনই হ্যাকাররা তাদের তৃতীয় চোখ খুলে ফেলে। আমরা যেগুলোতে সম্মতি দিয়ে দিলাম তারা সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের সব তথ্য নিজেদের কাছে সেইভ করে নিল।
এরপর আসি গুগল ফটো অর্থাৎ গুগলে রাখা আমাদের ব্যক্তিগত ছবির কথায়। আমরা নিজেদের ফোনে ছবি তুলবো, রাখবো এটাতো স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তুু যখন আপনি এটির বিপরীত কিছু করছেন আপনার অতি গোপন ছবি তুলছেন এবং সেগুলো কাউকে পাঠাচ্ছেন এবং পাঠানোর সাথে সাথে সেগুলো আপনি ডিলিট দিচ্ছেন বা মুছে ফেলছেন। আদৌ কি সেগুলো শুধু যাকে দিচ্ছেন তার কাছেই যাচ্ছে বা সত্যি কি ডিলিট করার সাথে সাথে সেগুলো চিরতরে মুছে ফেলতে পারছেন?
আপনি আপনার মোবাইল ফোনের উপর এতটা বিশ্বাস করছেন যে নিজের ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি স্টোর করে রাখছেন আপনি ভাবছেন আপনি না চাইলে সেগুলো কেউ দেখতে পারবে না।
একবার ভাবুন তো যে মোবাইল ফোন যদি এতটা বিশ্বস্তই হতো তাহলে কখনোই কেউ ব্যক্তিগত হেনস্তার শিকার হতো? কারো ব্যক্তিগত তথ্য ভাইরাল হতো? কেউ কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির মধ্যে পড়তো?
এছাড়া আমাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন গেইম দেখি যেগুলোতে লেখা থাকে টাকা ইনকাম অ্যাপস। এমন নয় যে সকল গেইমস ফেইক, হ্যাঁ অবশ্যই অনেক অ্যাপস থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন আপনি, তবে আপনি কি নিশ্চিত যে এই অ্যাপস শুধু টাকাই দিচ্ছে আপনার কোনো ক্ষতি করছে না।
আপনি সেই গেইমে নির্ধিদ্বায় প্রবেশও করছেন।
আসলে আপনি নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতির কারণ হচ্ছেন। ব্যাপারটা কিছুটা এরকম যে, আমরা টিভিতে বাংলা ছবি দেখার সময় দেখতাম না যে, না বুঝে, না পড়ে একটা টিপসই বা স্বাক্ষর দিয়েছেন পরে তিনি জানতে পারেন যে তার সমস্ত জমি আত্মসাৎ হয়ে গেছে। সেরকমই আপনি না বুঝে, না পড়ে যে লিংক বা শর্তাবলীগুলোতে সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন হতে পারে পরবর্তীতে সেগুলোই আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
মোবাইল ফোনের নিরাপত্তা বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, বড় বড় দেশের তথ্য এখন মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে, যখন তখন যে কেউ হেনস্তার শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিরাট তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও তিনি এখানে তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, নিজের অথবা নিজের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত সুরক্ষায় সাইবার সিকিউরিটি পিরামিডের একেবারে টপ টু বটম প্রতিটি জায়গায় আমাদের সুরক্ষা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। এই পিরামিডের বটমে যেসব সাধারণ ব্যবহারকারী আছে তাদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো এবং অনুশীলন করাতে হবে। এছাড়া ফোন ব্যাবহারের সময় ফোনের সুরক্ষা ব্যবস্থা সর্ম্পকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।অতএব, এখনই সময় আপনি নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করুন।
সচেতন থাকুন এবং সুন্দর জীবন-যাপন করুন।